যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের আর্লিংটন। পটোম্যাক নদীর ঠিক অপর পারে অবস্থিত ৫ কোণা বিশিষ্ট এই বিল্ডিং। পৃথিবীর সবচেয়ে সুরক্ষিত ভবনগুলোর অন্যতম এই স্থাপনাটির নাম পেন্টাগন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের এই সদর দফতর সাদামাটা কোন অফিস নয়। বরং, এখান থেকেই পুরো বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে আমেরিকা। এই ভবনের ভেতরেই রয়েছে মার্কিন আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স, মেরিন, ন্যাশনাল গার্ড ও কোস্ট গার্ডের সদর দফতর। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তির হার্ট হিসেবে পরিচিত অজেয় এই দুর্গটির ভেতরগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতোটা শক্তিশালী? এতো গুরুত্বপূর্ণ এই ভবন কি কখনো দখল করা সম্ভব?
সরাসরি সামরিক আক্রমণের মাধ্যমে পেন্টাগন দখল করা প্রায় অসম্ভব। ভবনের চারপাশে রয়েছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রাডার, ক্যামেরা, অত্যাধুনিক মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। আশপাশের আকাশে উড়ন্ত কোন বিমানের গতি ও ফ্লাইট প্ল্যান বিশ্লেষণ করে হুমকি মনে হলে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে স্বয়ংক্রীয় সেন্সর। কোনো যানবাহন বা উড়োজাহাজ নির্ধারিত পথের বাইরে গেলে প্রথমে পাঠানো হয় সতর্ক সংকেত। নির্দেশ অমান্য করলে, সেগুলো ধ্বংস করতে তৎপর হয় মিসাইল সিস্টেম ও যুদ্ধবিমান। পেন্টাগনের ভেতরে সরাসরি কোন পার্সেল ডেলিভারি অসম্ভব। কিছু পাঠালে সেটা আগে পরীক্ষা করা হয় বিশেষ সুরক্ষিত স্থানে। কোনো বিস্ফোরক বা রাসায়নিক অস্ত্র ভবনে প্রবেশ ঠেকাতেই এই ব্যবস্থা।
সুপারসিকিউর পেন্টাগন ভবনটি নির্মাণ করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। ১৯৪১ সালে নির্মাণ শুরু হয়ে মাত্র ১৬ মাসে তৈরি হয় এই ভবন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন রুজভেল্টের পরিকল্পনা ছিলো- যুদ্ধ পরিচালনার জন্য যতো দ্রুত সম্ভব কার্যকরী একটি প্রতিরক্ষা সদর দফতর গড়ে তোলা। আকর্ষণীয় পাঁচকোণা ডিজাইন প্রথমে ভৌগোলিক কারণে নেয়া হলেও পরবর্তীতে এটি হয়ে ওঠে মার্কিন সামরিক শক্তির প্রতীক। তখনকার হিসাবে এতে একসাথে কাজ করতে পারে ৭৭,০০০ মানুষ। পুরো ভবনের করিডোরের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭ মাইল। পারমাণবিক হামলাও ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম পেন্টাগনের নিরাপত্তা।
১৯৯০-এর দশকে অ্যাসবেস্টস দূষণের কারণে পুনর্নির্মাণ করা হয় পেন্টাগনের একটি অংশ। তখন নতুন করে অত্যাধুনিক করা হয় ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। একসময় ভবনের নিচে ছিলো আন্ডারগ্রাউন্ড সাবওয়ে স্টেশন। পরে সেটা বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০০১ সালে, যখন আল-কায়েদা হামলা চালায়, সৌভাগ্যক্রমে সেই বিমানটি পেন্টাগনের সবচেয়ে শক্তিশালী ও নিরাপদ অংশে আঘাত হানে। এই অংশে ছিলো স্টিলের স্তম্ভ, কেভলার জাল, এবং ৫০০ পাউন্ড ওজনের বিস্ফোরণ-প্রতিরোধী কাচের জানালা—যেগুলো বিমান আঘাত করলেও ভাঙেনি। এরপর প্রজেক্ট ফিনিক্স শুরু হয়, যা পুরো ভবনটিকে সন্ত্রাসবিরোধী দুর্গে পরিণত করে।
বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থানগুলোর একটি হলেও, পেন্টাগনকে নিরাপদ রাখার চ্যালেঞ্জ কখনো শেষ হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন দেশ ও হ্যাকার গোষ্ঠী এই ভবনের সাইবার সিকিউরিটি ভাঙার চেষ্টা করছে। এখানে প্রবেশ সাধারণের জন্য প্রায় নিষিদ্ধ। পেন্টাগন সম্পর্কে যেসব তথ্য পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগই বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক সূত্রের দেয়া। প্রযুক্তির উন্নতির এই যুগে পেন্টাগন কি সবসময় এতোটা নিরাপদ থাকবে, নাকি ভবিষ্যতে কোনো অপ্রত্যাশিত দুর্বলতা প্রকাশ পাবে, সেটা একটি জটিল প্রশ্ন। তবে, কখনো এই অজেয় দূর্গে দখলদার হানা দিলে, আমেরিকার জন্য হবে কঠিন বিপদ।