সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিশির ভট্টাচার্য সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কিত মন্তব্য করে জনসাধারণের তীব্র প্রতিক্রিয়া ও নিন্দার সম্মুখীন হয়েছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ-এর হিজরতের মতো ঐতিহাসিক ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে অনভিপ্রেত ও অসম্মানজনক বক্তব্য প্রকাশ করেন। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতাপ্রসূত এ মন্তব্য শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত দেয়নি, বরং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাও সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মহানবী (ﷺ)-এর হিজরত জালিমের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠার এক মহান উদাহরণ। ধর্মীয় ইতিহাসে এই ঘটনা মানবাধিকারের চূড়ান্ত স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এ ঘটনার সঙ্গে ভুল তুলনা বা বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করা শুধু নৈতিক অবক্ষয় নয়, ধর্মীয় অবমাননার শামিল।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ফৌজদারি আইনের ২৯৫ ধারা অনুযায়ী, কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অবমাননা করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড অথবা উভয় শাস্তির বিধান রয়েছে।
তদুপরি, একটি পবিত্র ধর্ম ও মহানবী (ﷺ)-এর অবমাননার মতো গুরুতর ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
ইসলাম ধর্মে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-কে অবমাননা অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। শরিয়াহ বা ইসলামি আইন অনুযায়ী, এ অপরাধের শাস্তি কঠোর এবং অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে তা নির্ধারিত হয়।
কুরআনের নির্দেশনা:
পবিত্র কুরআনে মহানবী (সা.)-এর অবমাননাকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
• সূরা আল-আহযাব (৩৩:৫৭):
“যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য ইহকাল ও পরকালে আল্লাহর অভিশাপ রয়েছে; আর তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।”
এ আয়াত স্পষ্টভাবে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে কষ্ট প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির কথা জানিয়েছে।
হাদিসের আলোকে শাস্তি:
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে কেউ তাঁকে অবমাননা করলে কঠোর শাস্তি কার্যকর করা হতো। নবী (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি নবীকে গালি দেয় বা তাঁকে অবমাননা করে, তাকে হত্যা করো।” (আবু দাউদ, ৪৩৬২)
এ হাদিসের ভিত্তিতে নবীকে (সা.) অবমাননা করা ব্যক্তি মুসলিম হলে তা “রিদ্দাহ” বা ধর্মত্যাগের শামিল। ইসলামি শরিয়াহ মতে এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
ইসলামি ফিকহ ও আলেমদের ইজমা:
চার মাযহাবের (হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি, হাম্বলি) আলেমগণ সর্বসম্মতভাবে মতামত দিয়েছেন যে: মুসলিম ব্যক্তি যদি নবী (সা.)-কে অবমাননা করে, তবে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। অমুসলিম ব্যক্তি অবমাননা করলে তার জন্যও শাস্তির বিধান রয়েছে, যা শরিয়াহ আদালত নির্ধারণ করবে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ইমাম নববি এবং অন্যান্য ইসলামি আইনজ্ঞদের মতে, নবী (সা.)-কে অবমাননাকারী ব্যক্তি তওবা করলেও তার ক্ষমার সুযোগ নেই।