‘স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে চায়’ (রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়)। আজ ২৬ মার্চ ৫৫তম স্বাধীনতা দিবস। সত্যিই দেশের ১৮ কোটি মানুষ এবার মুক্ত পরিবেশে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে। ১৯৭১ সালে এদিন স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। কিন্তু সে স্বাধীনতা কার্যত ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। মানুষ হয়ে পড়েছিল নিজ দেশে পরবাসী। দীর্ঘ ১৮ বছর স্বাধীনতা দিবসটি পালিত হতো মুজিব বন্দনা আর ভারতের দিল্লির দাসত্বকে মেনে নেয়ার অঙ্গীকারের মাধ্যমে। ’৭১ এর রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন দলে রাজনীতিতে সম্পৃক্তি মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় দিবসটির রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হতো না। ‘জাতীয় দিবস’ পালন মানেই ভারতীয় অতিথিদের এনে তাদের কদমবুছি করা; তাদের সম্মান জানানো রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। আর রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা খরচ করে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘উচ্চ থেকে আরো উচ্চতর’ অবস্থানে উঠানো হতো। গত ৫ আগষ্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মানুষ দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ভারতে পালিয়েছে দিল্লির পুতুল এ যুগের ঘসেটি বেগম শেখ হাসিনা। মানুষ এবার প্রকৃত স্বাধীন ভাবে দিবসটি পালন করবে। দিবসটি পালনে সরকারি ভাবে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
স্বাধীনতা প্রতিটি জাতির জন্য গর্ব আর অহঙ্কারের। বাংলাদেশের সব মানুষ চিরকাল গর্ববোধ করেন যে দিনটির জন্য, সেটি আজকের এই দিন ২৬ মার্চ, ৫৫তম স্বাধীনতা দিবস। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত গণহত্যা অভিযান ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এ ঢাকার রাজপথ রক্তে ভাসিয়ে দেয়। সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে বিপদের মুখে ফেলে দিয়ে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রহস্যজনকভাবে পাকিস্তান বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের জীবন বাঁচাতে পঙ্গপালের মতো পড়িমরি করে ভারতে পালিয়ে যান। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ভয়ংকর মারণাস্ত্র নিয়ে গণহত্যার পৈশাচিকতায় মেতে উঠে। প্রতিরোধ সংগ্রামের লক্ষ্যে দামাল ছেলেরা মুখিয়ে থাকলেও প্রধান নেতা শেখ মুজিব ধরা দেয়া এবং অন্যান্য নেতারা ভারতে পালিয়ে যাওয়ায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। এমনি সময় ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে মেজর জিয়াউর রহমান দেশমাতৃকায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’ দেন। পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ায় জাতি, সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দেশের বীর সন্তানেরা যুদ্ধের ময়দানে ছুটে গিয়ে শত্রæর মোকাবিলা করেন। যুদ্ধের ময়দানে জীবনের মায়া তাদের কাছে ছিল তুচ্ছ। তাদের ছিল না যুদ্ধের প্রশিক্ষণ, ছিল না কোনো উন্নত সমরাস্ত্র। মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষণা তাদের উজ্জীবিত করেছিল সাহসে, সংগ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্ণেল (অব.) আতাউল গনি ওসমানী। দীর্ঘ ৯ মাস শক্তিশালী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে অসম যুদ্ধ করেছিলেন দেশের সব ধর্ম, বর্ণ, ভাষার বীর সন্তানেরা। হানাদার বাহিনীকে মোকাবিলা করে মুক্তির সংগ্রামে সফল হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। ছিনিয়ে এনেছিলেন চ‚ড়ান্ত বিজয়। জাতিকে মুক্ত করেছিলেন পরাধীনতার শৃংখল থেকে। প্রশ্ন হচ্ছে স্বাধীনতার ৫৫ বছরে কী বাংলাদেশ প্রত্যাশিত সাফল্য পেয়েছে? প্রত্যাশা-আর প্রাপ্তির মধ্যে ফারাক কতদূর। তবে দীর্ঘ দেড় যুগ পর জাতি মুক্তভাবে দিবসটি পালন করবে। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব কী। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে কোনো রাষ্ট্র যে ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকতে পারে, তাকে সার্বভৌমত্ব বলে। সার্বভৌমত্ব কোনো পরিচালনা পরিষদের বাইরের কোনো উৎস বা সংগঠনের হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করার পূর্ণ অধিকার ও ক্ষমতা। প্রকৃত অর্থে আমজনতা প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে? হাসিনা রেজিমে ১৫ বছর দেশের সবকিছু পরিচালিত হয়েছে দিল্লির নির্দেশে। এমনকি দেশকে হিন্দুত্ববাদী ভারতের অঙ্গ রাজ্যে পরিণত করা হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কোনো দেশে সফরে গেলে দিল্লির অনুমতি পত্র (এনওসি) নিতে হতো। হাসিনার পালানোর কয়েক মাস আগে চীন সফরের যাওয়ার আগে ওই সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা চীন সফরে দিল্লির কোনো আপত্তি নেই’।