বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বে গেম এখন মাদক, জুয়া ও অন্যান্য নেশার মতোই ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। শিশুরা তাদের শৈশব হারাচ্ছে, তরুণরা হারাচ্ছে কর্মক্ষমতা । কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, এই গেমগুলো কারা তৈরি করছে এবং আমাদের জীবনে এগুলো কী প্রভাব ফেলছে?
মুসলিম তরুণরা, যারা একসময় জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক ছিল, তারা এখন পরনির্ভরশীল ভোক্তায় পরিণত হয়েছে। পশ্চিমা ও পূর্ব দেশগুলো গেম তৈরি করছে, আর মুসলিম বিশ্ব তাদের বানানো গেম খেলে নিজেদের অর্থ, সময় ও মেধা নষ্ট করছে। একসময় মুসলমানরা বিশ্বকে গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও প্রকৌশলে নেতৃত্ব দিয়েছিল; আর এখন তারা অন্যদের তৈরি গেম খেলে নিজেদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। গবেষণাধর্মী কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করার বিপরীতে অযথা সময় নষ্ট করছে।
PUBG, Free Fire, Clash of Clans এবং এমন অনেক জনপ্রিয় গেম মূলত চীন, কোরিয়া, ফিনল্যান্ড এবং জাপানের মতো দেশে তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশী তরুণদের মধ্যে এ গেমগুলো ব্যাপকভাবে খেলা হয়। বাংলাদেশের স্টুডেন্টস সোসাইটির মধ্যে এমনভাবে গেম প্রবেশ করেছে যে তারা গেম ছাড়া কিছুই বুঝে না। এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত গেম খেলে। বাংলাদেশের মতো অনুন্নত দেশের জন্য গেম খেলা কি আদৌ যুক্তিযুক্ত? দেশের মেরুদণ্ড যারা, যারা দেশকে ইসলামের পথে নেতৃত্ব দিবে, তারা গেমের মাধ্যমে পশ্চিমা ও পূর্ব দেশগুলোর গোলামি করছে।
বেশিরভাগ জনপ্রিয় গেমই সহিংসতা, হত্যা, নৈতিক অবক্ষয় ও অনৈতিক জীবনধারাকে উৎসাহিত করে। PUBG, Free Fire, Call of Duty-এর মতো গেমে হত্যা করাসহ নানা সহিংসতা শেখানো হয়। আবার অনেক গেমে রয়েছে নগ্নতা, মদ্যপান ও জুয়া—যা তরুণদের মূল্যবোধ নষ্ট করছে, যা ইসলামি শরীয়াহ সম্মত নয়।
গেম আসক্তি শুধু মানসিকভাবে নয়, শারীরিকভাবেও ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘসময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে মস্তিষ্কে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। মনোযোগ কমে যায়, উদ্বেগ বেড়ে যায়, এবং মানুষ বাস্তব জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
আগে পরিবারে সবাই একসঙ্গে সময় কাটাত, গল্প-গুজব করত, নিজেদের অনুভূতি ভাগাভাগি করত। এখন অনেক ঘরে দেখা যায়, পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে বসে থেকেও যার যার মোবাইল বা কম্পিউটারে গেম খেলায় ব্যস্ত। এতে পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, আত্মীয়তার সম্পর্ক শিথিল হচ্ছে, এবং মানুষ একাকীত্বে ভুগছে, যা ইসলামের শিক্ষা নয়।
আমরা আমাদের সময়, মেধা ও সম্ভাবনাকে এভাবে নষ্ট হতে দিতে পারি না। আমরা আমাদের সন্তানদের গেমের আসক্তিতে ফেলে দিচ্ছি। আমাদের সময়ের মূল্য বুঝতে হবে, গেমের আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং এমন কাজ করতে হবে যা আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে। অভিভাবকদের কড়া নজরদারি এবং শাসন সন্তানের আলোর পথে ফেরাতে পারে। মুসলিম তরুণদের নিজেদের প্রতিভা ও মেধা ব্যবহার করে প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও গবেষণায় ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে আমরা আবারও বিশ্বের জন্য আলোর দিশারী হতে পারি এবং আমাদের গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারি।