সময়ের সংবাদ ডেস্ক | খিলাফত
১৯২৪ সালে যখন তুরস্কে শেষ ইসলামী খিলাফতের পতন ঘটে, তখন থেকেই মুসলিম উম্মাহ এক গভীর সংকটের মুখোমুখি হয়।খিলাফত ভেঙে দিয়ে তথাকথিত “গণতন্ত্র” ও “জাতিরাষ্ট্রের” নামে পশ্চিমা পরাশক্তিরা মুসলিম বিশ্বকে উপনিবেশিক শৃঙ্খলেআবদ্ধ করে। আর এই ১০০ বছরে মুসলমানদের ওপর চলে এসেছে গণহত্যার বন্যা।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা, মানবাধিকার সংস্থা ও ইতিহাসবিদদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১০০ বছরে প্রায় ৩ কোটিমুসলমান বিশ্বব্যাপী সরাসরি হত্যা, গণহত্যা, দমন–পীড়ন ও যুদ্ধের শিকার হয়েছেন।
সাধারণ গাণিতিক বিশ্লেষণ বলছে, ১০০ বছরে (৩৬,৫০০ দিনে) ৩ কোটি মানুষকে হত্যা মানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮২১ জনমুসলমান নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। এ সংখ্যা শুধুমাত্র প্রকাশ্য তথ্যের ভিত্তিতে, গোপন গণহত্যা, কারাগারে মৃত্যুদণ্ড, নিখোঁজও গুমের ঘটনা এই পরিসংখ্যানের বাইরে।
একজন মানুষের শরীরে গড়ে ৫ লিটার রক্ত থাকে। সে হিসেবে ৩ কোটি মুসলমান হত্যার মানে ১৫ কোটি লিটার রক্ত পৃথিবীরবুকে ঝরেছে। যা দিয়ে প্রায় ৬০টি অলিম্পিক সাইজের সুইমিং পুল পূর্ণ করা সম্ভব। (একটি অলিম্পিক সুইমিং পুলে প্রায় ২৫লাখ লিটার পানি ধারণক্ষমতা থাকে।)
গণতন্ত্রের নামে মুসলিম নিধনের ইতিহাস এক দীর্ঘ ও রক্তাক্ত অধ্যায়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেইফিলিস্তিনে মুসলমানদের ওপর দখলদারিত্ব, দমন–পীড়ন ও গণহত্যা চলছেই। কয়েক লক্ষ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন, লক্ষাধিকআহত ও বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যার অধিকাংশই শিশু ও নিরীহ নাগরিক। ইরাক ও আফগানিস্তানে তথাকথিত “সন্ত্রাসবিরোধীযুদ্ধের” নামে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী যে যুদ্ধ চালিয়েছে, তাতে লাখ লাখ মুসলমান নিহত হয়েছেন। তাদের ঘরবাড়ি, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা ধ্বংস হয়ে গেছে। বসনিয়া ও রুয়ান্ডার ঘটনাও গণতন্ত্র ও জাতিসংঘের নির্লিপ্ততা এবং পাশ্চাত্যেরইসলামবিদ্বেষী নীতির নগ্ন উদাহরণ। শুধু বসনিয়ায়ই প্রায় ৮ হাজার মুসলমান পুরুষ ও কিশোরকে স্রেব্রেনিৎসায় একদিনেই হত্যাকরা হয়। চীন, মিয়ানমার এবং ভারতেও তথাকথিত গণতন্ত্রের ছত্রছায়ায় মুসলমানদের ওপর নেমে এসেছে রাষ্ট্রীয় নির্যাতন ওনিধনের ভয়াল ছায়া। উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনে যে নজিরবিহীন নির্যাতন চলছে, কিংবা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধেপরিচালিত জাতিগত নির্মূল অভিযান অথবা ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক রাজনীতি ও সহিংসতা—এসবইপ্রমাণ করে, গণতন্ত্রের মুখোশের আড়ালে এক ভয়ংকর ইসলামবিরোধী শাসনব্যবস্থা মুসলমানদের ধ্বংসের খেলায় মেতেউঠেছে।
এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে—এটি শুধু মানুষ হত্যার সংখ্যা নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামবিরোধী কাঠামোগত যুদ্ধ, যেখানেখিলাফতহীন মুসলিম উম্মাহ অসহায় ও নেতৃত্বহীন অবস্থায় গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতার নামে নিধনের শিকার।
এই বিপর্যয় থেকে মুসলিম উম্মাহর মুক্তি একমাত্র সম্ভব একটি ঐক্যবদ্ধ ইসলামী নেতৃত্ব এবং জিহাদ তথা খিলাফতের ছায়া।কারণ, যতদিন উম্মাহর মাথায় কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকবে না, যতদিন উম্মাহ জিহাদে ঝাপিয়ে পড়বে না, নিজেদেরভুলগুলো সংশোধন করবে না, ততদিন মুসলমানদের রক্ত ঝরতেই থাকবে—গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ কিংবা ধর্মনিরপেক্ষতারমুখোশে।
উৎসসমূহ:
1. Iraq Body Count Database
2. Syrian Observatory for Human Rights
3. UNHCR Reports
4. Genocide Watch
5. Global Muslim Demographic Studies