খাইবার যুদ্ধের পটভূমি
হিজরী সপ্তম বছরে (৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে) খাইবার নামক এক জনপদে সংঘটিত হয়েছিল এই ঐতিহাসিক যুদ্ধ। খাইবার ছিল হিজাজ অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইহুদি জনপদ, যেখানে বহু দুর্গ, অর্থসম্পদ ও কৃষিজ পণ্য ছিল। এখানে বসবাসকারী ইহুদিরা পূর্বে মদীনায় মুসলমানদের সঙ্গে চুক্তি করলেও একাধিকবার তারা তা ভঙ্গ করে, এমনকি কুরাইশ ও অন্যান্য মুশরিকদের সঙ্গে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রেও জড়িত হয়।
তাদের বিশ্বাসঘাতকতা ও মুসলিম নিরাপত্তার প্রতি হুমকি তৈরি হওয়ায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এক কৌশলী অভিযান পরিচালনা করেন খাইবারের দিকে। প্রায় ১,৬০০ সাহাবিকে নিয়ে তিনি খাইবার অভিযানে অংশ নেন।
যুদ্ধ এবং বিজয়
খাইবারে ইহুদিদের নয়টি দুর্গ ছিল। একে একে মুসলমানরা এসব দুর্গ বিজয় করেন। যুদ্ধে সাহাবিরা ছিলেন অতুলনীয় সাহস ও আত্মত্যাগের প্রতীক। বিশেষত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.)-এর অসাধারণ বীরত্ব ইতিহাসে স্মরণীয়। রাসূল ﷺ তাঁকেই শেষ দুর্গের দিনে যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন, যেদিন মুসলমানরা সবচেয়ে বড় দুর্গটি জয় করে।
যুদ্ধের ফলাফল
খাইবার যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলিমদের রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। ইহুদিদের চক্রান্ত ও বিশ্বাসঘাতকতার মূল কেন্দ্র একপ্রকার ভেঙে পড়ে। তবে, রাসূল ﷺ এর নির্দেশে অনেক ইহুদিকে হত্যা না করে জমিতে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়—এই শর্তে যে তারা মুসলমানদের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করবে এবং জমির অর্ধেক ফসল মুসলমানদেরকে দেবে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিকতা
ইহুদিদের চুক্তিভঙ্গ, বিশ্বাসঘাতকতা ও দখলদার মনোবৃত্তির ইতিহাস নতুন নয়। আজকের ফিলিস্তিনেও আমরা একই চিত্র দেখতে পাই—ইজরায়েল কর্তৃক গণহত্যা, জমি দখল, শিশু-নারী হত্যা এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
ফলে, মুসলমানদের প্রতিবাদে যখন ‘খাইবার’ নামটি উচ্চারিত হয়, তখন তা শুধুমাত্র একটি যুদ্ধের স্মরণ নয়, বরং একটি আদর্শের ঘোষণাও—ন্যায়বিচার, প্রতিরোধ ও সম্মিলিত চেতনার জাগরণ।
‘খাইবার খাইবার’ স্লোগানটি ইতিহাসের ধ্বনি মাত্র নয়, এটি মুসলমানদের ঐক্য, প্রতিবাদ ও প্রতিশোধের চেতনাকে জাগ্রত করে। ইতিহাস বলে, চক্রান্ত যত গভীরই হোক, সত্য ও ন্যায় একদিন বিজয়ী হবেই।